প্রফেসর মোঃ কুদরত-ই খুদা লাইফ গভর্ণর ও অতীত জাতীয় সভাপতি অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান-মানুষের রয়েছে এ পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রাথমিক দায়িত্ব সরকারের উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সরকারের পক্ষে এ দায়িত্ব সম্পূর্ণরুপে পালন করা সম্ভব নয় বিধায় সে সকল দেশে বিদেশী সাহায্যে অনেক এন.জি.ও কাজ করছে। বাংলাদেশেও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। স্বধীনতার পর থেকে বহু এন.জি.ও বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। পাশাপাশি কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজস্ব অর্থায়নে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। তার মধ্যে এপেক্স ক্লাব, লায়ন্স ক্লাব ও রোটারী ক্লাব অন্যতম। ১৯৩০ সালে অস্ট্রেলিয়ার জিলং শহরে তিনজন মহা মনীষী ইঞ্জিনিয়ার লংহাম প্রাউড, ইউইন লেয়ার্ড ও জন বুচান প্রথম মহাযুদ্ধের অর্থেনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে বন্ধুত্বের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের লক্ষে যে দুঃখী মানুষের সহায্যার্থে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বিশ্বজুড়ে সেবার আলো বিকীরণ করেছে। বাংলাদেশে এর ঢেউ লেগেছে ১৯৬১ সনে “এপেক্স ক্লাব অব ঢাকা” গঠনের মাধ্যমে। এপেকস ক্লাব একটি অরাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এপেক্স ক্লাবের পরিচয় পাওয়া যায় তার লোগোতে। লোগো বা মনোগ্রামে একটি সমবাহু ত্রিভ‚জ রয়েছে। মাঝখানে রয়েছে উদীয়মান সূর্য। ত্রিভুজটির তিন বাহু তিনটি আদর্শের প্রতীক। ত্রিভূজের ভ‚মি নাগরিকত্বের প্রতীক, অপর দুটি বাহুর একটি সেবা ও অপরটি সৌহার্দ্য বা বন্ধুত্ব , মাঝখানে উদীয়মান সূর্য রশ্মিœর মত বিকশিত হহেত থাকেন এবং সেবা সোহার্দ্য ও নাগরিকত্বকে আর্দশে লালিত হয়ে এপেক্স জীবনে শেষাংশে স্ব স্ব পেশার শীর্ষে আসীন হন এবং সমাজে ও জাতীয় জীবনে এমনকি আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভ‚মিকা রাখেন। প্রশ্ন হতে পারে নাগরিকত্ব কে কেন এপেক্স এর ভূাম বা ভিত্তি করা হলো, সেবা বা বন্ধুকে কে ভিত্তি করা হয়নি? মজবুত ইমারত করতে হলে শক্ত ভিত্তির প্রয়োজন। দূর্বল ভিত্তির উপর কিছু নির্মাণ করলে তা দূর্বলই হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সেবা কিংবা বন্ধুত্বকে এপেক্সের ভিত্তি করা যায় কিনা দেখা দেখা যাক। সেবা একটি সদগুণ। কিন্তু এ গুণটি একজন অসৎ লোকের মধ্যে ও থাকতে পারে। একটি সঙ্ঘবদ্ধ চোরাকারবারী দলের সদস্য সমাজে সেবার কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। চোরাকারবারীদের আয় রোজগার নিশ্চয়ই বৈধ নয়। অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা রোজগার করে লক্ষ লক্ষ টাকা দান করে দানবীর সাজতে পারে এবং সমাজের হর্তা-কর্তা-বিধাতা হতে পারে। আমাদের সমাজে এ দৃষ্টান্ত বিরল নয়। কিন্তু এ ধরনের সেবা এপেক্স গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষের সাথে সৌহাদ্য বা বন্ধুত্ব করা একটি প্রশংসনীয় কাজ। বন্ধুত্বের মাধ্যমে দলের সৃষ্টি। বিশেষ কেন লক্ষ্য অর্জনে সমমনা মানুষের সমন্বয়ে দল গঠিত হয়। একটি ডাকাত দলের কথা ভাবা যাক। আন্তঃজেলা ডাকাত দল খুবই সংগঠিত। দলের সদস্যদের মধ্যে দারূন বন্ধুত্ব। একে অপরের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, পুলিমের রিমান্ডে ও তারা মুখ খুলে না, বলে না সাথীদের নাম। ডাকাত দলের বন্ধুত্ব কি কারো আদর্শ হতে পারে? এ ধরনের বন্ধুত্ব এপেক্সে গ্রহণযোগ্য নয়। এবার নাগরিকত্বের কথায় আসা যাক। এপেক্সে নাগরিকত্ব মানে সুনাগরিকত্ব। সততা, সত্যবাদিতা ন্যয়পরায়ণতা, পরোপকারিতা, নিয়মানুবর্তিতা, নিষ্ঠা, বিনয়, ভালবাসা, দেশপ্রেম, এ সকল গুণাবলী যার মধ্যে বর্তমান তিনিই প্রকৃত অর্থে সুনাগরিক। একজন এপেক্সিয়ান সুনাগরিক এবং তার মধ্যে এ সকল গুণ থাকার কথা। নতুবা তিনি এপেক্স নামে পরিচয়ের যোগ্য নন। আর সে জন্যই নাগরিকত্বকে এপেক্সের ভিত্তি করা হয়েছে, সেবা বা বন্ধুত্বকে নয়। এপেক্সিয়ান নামধারী কেউ অসৎ হতে পারে না, মিথ্যা বলতে পারে না অন্যায় কাজ করতে পারে না, টেক্স ফাঁকি দিতে পারে না, অবৈধ রোজগার করতে পারেনা, কারো ক্ষতির কথা চিন্তাও করতে পারেনা একজন এপেক্সিয়ান হবেন সৎ, সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ। তিনি মানুষকে ভালবাসেন এবং তার বৈধ রোজগার থেকে যতটুকু পারেন গরীব দুঃখীদের সেবা করতে পারেন; কিন্তু তিনি এপেক্সিয়ান হতে পারেন না। এপেক্সের স্মৃতিকর্ণার অস্ট্রেলিয়া। একজন এপেক্সিয়ানের সততা প্রশ্নতীত, সেখানে এপেক্সিয়ানদের কাষ্টম চেকিং করা যায় না। কারণ এপেক্সিয়ানরা মিথ্যা বলবেন তা ভাবাই যায় না। সে সমাজে একজন এপেক্সিয়ান গর্বিত মানুষ। সে দেশে একজন এপেক্সিয়ানের সন্তান এপেক্স ক্লাবে যোগদান না করলে বাবা-মা দুশ্চিন্তায় পড়েন। কি সমস্যা সন্তানের। কেন সে এপেক্সে যোগ দিচ্ছে না। অষ্ট্রেলিয়ায় এপেক্স এতটাই সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত।(চলবে)
Leave a Reply