বাংলাদেশে এপেক্স
বাংলাদেশে এপেক্স ক্লাবের বার্তাবহনকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুলেমান খান। বাংলাদেশে এপেক্স রশ্মির প্রথম বিচ্ছুরণ ঘটে ১৯৬১ সালে। ঐ বছরের ১৯ জুলাই ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম ক্লাব, এপেক্স ক্লাব অব ঢাকা। ঢাকা ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আহমেদুুর রহমান ও সম্পাদক সৈয়দ এ.কে. মাহমুদুল হক। পরবর্তিতে ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম এবং আরও পরে সিলেট. কুমিল্লা, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ও জাহাঙ্গীরনগর ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হয়। এই ৭টি ক্লাব নিয়ে ১৯৭৬ সালে ন্যাশনাল এসোসিয়শন অব এপেক্স ক্লাবস্ অব বাংলাদেশ গঠিত হয়। এর পূর্বে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার জোন-১০ এর অন্তর্ভূক্ত ছিল। পরবর্তিতে এপেক্স নেতাদের সক্রিয় প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা সদরেই এপেক্সের প্রসার হয়েছে। বর্তমানে ৯ টি এপেক্স জেলা, চার্টার্ড ক্লাবের সংখ্যা ১২২ টি ও আনচার্টার্ড ক্লাবের সংখ্যা ১২ টি এবং এক্টিভ এপেক্সিয়ান রয়েছে প্রায় ৫০০০। বর্তমানে বাংলাদেশে এপেক্স ক্লাবগুলো ৯ টি জেলায় বিভক্ত ও একটি জাতীয় সংগঠনে একীভুত। ইহা এপেক্স গ্লোবাল (Apex Global) ও আন্তর্জাতিক যুব সমাজের প্রতিষ্ঠান ওকো ফাউন্ডেশন (WOCO Foundation) এর স্থায়ী সদস্য।
এপেক্সের উল্লেখযোগ্য অবদান
বাংলাদেশের এপেক্স ক্লাবগুলো ১৯৬১ সাল থেকে এদেশে কমভাগ্যবানদের মধ্যে বিরামহীন সেবাদান করে আসছে। প্রতি বছরই প্রতিটি ক্লাব নিজেদের সামর্থ ও আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে বহু সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। তন্মধ্যে সেবা কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য অবদান নিন্মে উল্লেখ করা হলোঃ
বৃক্ষরোপন কর্মসূচির পথিকৃৎ । প্রতিবছর এক মাস ব্যাপী বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পরিচালনা
বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও যুদ্ধাহত জনসাধারণের জন্য মেদুয়া, শিবপুর আটিভাওয়াল, চরবাটা, হলিশহর, নোয়াপাড়া, সিলেট, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালী, পিরোজপুর অঞ্চলে গৃহ নির্মাণ।
কম জ্ঞানবান ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা।
প্রতিবছর বিভিন্ন অঞ্চলে শীতার্ত মানুষকে কম্বল ও শীতের কাপড় বিতরণ।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের আউটডোর ক্লিনিক নির্মাণ ও একটি এম্বুলেন্স প্রদান।
বরিশাল হোমিওপ্যাথিক কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা ।
দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ছাউনী নির্মাণ।
দুঃস্থ মহিলাদের সেলাই শিক্ষা প্রকল্প।
পিরোজপুরে কিনপেক্স প্রকল্প ( উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র)।
বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য চক্ষুশিবির, বিনামূল্যে চিকিৎসা, ঔষদ সরবরাহের আয়োজন ও টিউবওয়েল বসানো ও রক্তদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
বগুড়ার বেকার যুবক প্রশিক্ষণ প্রকল্প।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা করা ।
বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্তদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রতিষ্ঠা প্রকল্প।
ময়মনসিংহের মাসকান্দায় ভেটেরেয়ানারী ক্লিনিক স্থাপন।
প্রায় সময়ই গরীব মৃত ব্যক্তির দাফনের ব্যবস্থা করা।
চট্টগ্রামে সন্ধানীকে রেফ্রীজারেটর প্রদান।
প্রতিবছর অনেক পঙ্গু প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার এপেক্স বাংলাদেশের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
সংগঠনের একটি স্থায়ী ডকুমেন্টারি আছে, যা ঢাকাস্থ গ্রীন রোডে অবস্থিত।
উপরোক্ত প্রকল্পগুলো ছাড়াও বাংলাদেশের এপেক্স ক্লাবসমূহ জাতীয় দুর্যোগ, মহামারী ও বন্যার সময় আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে এসে বহু সেবা প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে।
কৃতজ্ঞতা (Invocation)
For good food. For good fellowship and the priviledge to serve, we give thanks.
আনুগত্য প্রকাশ (Motion of Loyalty)
We the Apexians of Bangladesh pledge our aligiance to our beloved country, the people’s Republic of Bangladesh and to our President. God save Bangladesh and our President.
এপেক্স ক্লাবের উদ্দেশ্য (Objectives )
ব্যক্তি জীবনের সকল ক্ষেত্রে নৈতিক উন্নতির সক্রিয় চেষ্টা চালানো ।
পেশা , ব্যবসা ও বাণিজ্যে উন্নত নীতিবোধ সৃষ্টির জন্য উৎসাহিত করা এবং ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন ও প্রয়োগের বিকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে তৈরি ও প্রশস্ত করা।
স্থায়ী বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করা ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকা ।
বিশ্বের অপর দেশের যুবসমাজের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ।
এপেক্স ক্লাবের বৈশিষ্ট্য
সদস্যদের বয়স সীমা ১৮ হতে ৪৫ বৎসর ।
অর্থনেতিক সাহায্যের চেয়ে ব্যক্তির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকে এ সংগঠন বেশি প্রাধান্য দেয় ।
সুন্দর আনÍর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, যেখানে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জনের অপূর্ব সুযোগ রয়েছে ।
কম বয়সে সংগঠন করায় ক্লাবকে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে পেশায় দক্ষতা অর্জনের এক উৎকৃষ্ট উপায় এপেক্স ক্লাব।
নিজের মাধ্যমে সুপ্ত নেতৃত্বের প্রতিভা বিকাশের প্রকৃষ্ট উপায় এ ক্লাব । জীবন এখানে কমর্ঠ, উদ্যমী ও গতিশীল ।
এপেক্স যেহেতু যুব সমাজের সংগঠন , এখানে জীবন অনেক উপভোগ্য, ত্যাগী ও প্রতিযোগিতামূলক ।
এপেক্সের প্রতীক
প্রথম পৃষ্ঠায় এপেক্সের একটি প্রতীক আছে । এটি একটি সমবাহু ত্রিভুজ, যার প্রতি বাহু এক একটি অর্থ বহন করে । ত্রিভুজের ভুমি সুনাগরিকত্বের প্রতীক । প্রতিটি সমান বাহু দ্বারা ‘এপেক্স প্রত্যেকেই সমান’ এ কথা বোঝায়। মাঝে সোনালী সূর্য ও তার রশ্নি উদীয়মান তরুণ্যের প্রতীক । ১৯৩১ সালে প্রতীকটি এপেক্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইওয়েন লেয়ার্ড তৈরি করেন । সূর্য ও রশ্নি- সোনালী রং, পার্শ্বরেখা- নীল ও মাঠটি- লাল রং ।
এপেক্সের ইতিহাস
১৯৩১ সালের কথা তখন সারা বিশ্বব্যপীই ছিল অর্থনৈতিক মন্দা ও অস্থিতিশীলতা । বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া এই সমস্যায় অধিকতর নিমজ্জিত ছিল । এহেন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার জিলং শহরের তিন তরুন স্থাপিত ইওয়েন লেয়ার্ড, লংহাম প্রাউড এবং জন বাকান একত্রিত হলেন, কিভাবে এ জাতীয় সমস্যার মোকাবেলা করা যায় । অবশেষে তাদের মাথায় এলো যুবসমাজকে একত্রিত করে নিঃস্বার্থ কাজে নিয়োজিত করতে পারলে হয়তো কিছুটা করা যেতে পারে । তাই তারা প্রতিষ্ঠা করেন এপেক্স ক্লাব ,যা আজ মানব কল্যাণে সুন্দর ভুমিকার জন্য সারা বিশ্বময় পরিচিত।
এপেক্স গ্লোবাল (Apex Global )
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এপেক্স ক্লাব সমূহের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামের নাম এপেক্স গ্লোবাল ।
এপেক্স এবং ওকো (WOCO )
এপেক্স হচ্ছে আন্তর্জাতিক যুব সমাজের সংস্থা WOCO Foundation -এর একটি সদস্য । এপেক্সসহ আরও ৪ টি যুব সংগঠন যেমন জে ই সি সি, এ্যাকটিভ ২০/৩০, ক্রেষ্ট ও রাউন্ড টেবিল এর বিশ্বব্যাপী ক্লাবগুলোর আন্তর্জাতিক যুব সংগঠনের ফেডারেশনের নাম ওকো ফাউন্ডেশন । ওকো ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । এ সংগঠনের সদস্য সারা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত । বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বিভিন্ন দেশের যুব সমাজের মধ্যে ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যমে একটি সুন্দর বিশ্ব গড়ায় ওকো’র অবদান অনন্য । এপেক্সের একজন সদস্য স্বাভাবিকভাবেই ওকো’র সদস্য । ফলে তার বিস্তৃতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ।
এপেক্স একটি নেতৃত্ব ট্রেনিং কেন্দ্র।
একজন এপেক্সিয়ানকে প্রতি পনের দিন পর পর সভায় অংশগ্রহণ করতে হয় । সেবা প্রকল্পে ভ‚মিকা রাখতে হয় । নিয়মিত অংশগ্রহণ করার ফলে তিনিও সভার পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হন । প্রতিবছর ক্লাবের নেতৃত্বের বদলের ফলে প্রত্যেকের নেতৃত্বের প্রতিভা বিকশিত হয় । ভাবের আদান প্রদানের ফলে প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে সমৃদ্ধশালী হন । কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় একজনকে যে শিক্ষা দিতে পারেনি সে অপূর্ণ শিক্ষা এপেক্সে এসে পূর্ণতা লাভ করে । দেশে-বিদেশে ব›দ্ধুত্ব স্থাপনের ফলে তার চিন্তা চেতনা বিশ্বজনীন হয় ও জীবনকে অধিকতর সমৃদ্ধশালী করে তোলে ।
এপেক্সিয়ান হলে কি কি দায়িত্ব
এপেক্স ক্লাবে যোগদানের পর আপনকে মাসে অন্তত দুইবার ক্লাবের সভায় যোগদান করতে হবে । বছরে একবার ক্লাবের বার্ষিক চাঁদা প্রদান করতে হবে । সেবামূলক প্রকল্পসমূহে অংশগ্রহন করা সদস্যদের নৈতিক দায়িত্ব । তাছাড়া মাঝে মাঝে ক্লাবের লেডিস নাইট , জেলা সম্মেলন, জাতীয় সম্মেলন, বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহন করে অন্যান্য ক্লাবের সদস্যদের সাথে পরিচিত হয়ে নিজের বৃত্তের পরিধিকে আরও আধিকতর বিস্তৃত করতে পারবেন ।
কিভাবে এপেক্সিয়ান হওয়া যায়
আপনি যদি ১৮ হতে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে পুরুষ/মহিলা নাগরিক হন, আপনার যদি থাকে মোটামুটিভাবে আর্থিক স্বচ্ছলতা, সমাজ সেবার একান্ত বাসনা এবং দেশ-বিদেশে সমবয়সীদের মধ্যে ব›দ্ধুত্ব স্থাপনের ইচ্ছা, তাহলে আপনি বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে বিস্তৃত ক্লাবের নিকটতম ক্লাবটির সদস্য হতে পারেন । ঐ ক্লাবের সভাপতি, সেক্রেটারি বা মেম্বারশীপ পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে পরপর তিনটি ডিনার সভায় আপনাকে উপস্থিত হতে হবে এবং ক্লাবের কোন সেবা কার্য্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে । সভাগুলোয় আপনি অন্যান্য সদস্যদের চিনবেন এবং তারাও আপনাকে চিনবে । তারপর আপনার রুচি ও ইচ্ছার সাথে অন্যান্য সদস্যদের রুচি ও ইচ্ছার যোগসূত্র স্থাপন হলে একটি সুন্দর সভার মাধ্যমে আপনাকে ঐ ক্লাবের সদস্যপদ প্রদান করা হবে ।
ক্লাব পর্যায়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন এপেক্সিয়ান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ হয়ে একজন সমৃদ্ধ নাগরিক তথা যোগ্য নেতায় পরিণত হন ।তার নেতৃত্বের পরিধি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃতি লাভ করে । তিনি তার অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতা দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন ।প্রকৃতপক্ষে এপেক্স আপনার আমার সকলের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে অনুঘটকের কাজ করে, জীবনকে নিয়মানুবর্তিতা শেখায় , মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শ নাগরিক হতে পথ দেখায় এবং জীবন হয় উপভোগ্য ও আনন্দময় ।
Leave a Reply