এপেক্স বাংলাদেশের জাতীয় সভাপতির জরুরী বার্তা

আসসালামু আলাইকুম। করোনা ভাইরাস এর এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের এই দেশ সত্যিকারের এক মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি। করোনা যতটা সমস্যাসঙ্কুল, আমরা এই দেশের মানুষগুলো এটাকে আরো বেশি জটিল ও ভয়ানক করে তুলেছি। আমাদের এখন মারাত্মকভাবে সর্তক হওয়ার সময় এসেছে, আতংকিত নয়, ভয় পাওয়ার সময় এসেছে। আপনারা আপনাদের নিজেদের জন্য, পরিবারের জন্য, বৃদ্ধ মা-বাবা, অসুস্থ স্বজনদের জন্য, অসহায় গরীব মানুষগুলোর জন্য, আর্তমানবতার সেবার জন্য, সরকারি নির্দেশনা মানার জন্য, আপনাদের প্রিয় আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “এপেক্স বাংলাদেশ” এর জন্য এবং দেশকে দীর্ঘমেয়াদী সংকট থেকে মুক্তির এই যুদ্ধে সফল যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য চূড়ান্ত সতর্ক হোন,একটু কৌশলী ও বাস্তববাদি হোন। এবং হ্যাঁ একটু পিছিয়ে আসুন। সত্যিকার অর্থে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমাদের এই দেশ একটা ভয়ানক গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে। দেশের অবস্থা ভালো নেই, প্রতিদিন করোনাক্রান্ত হয়ে এই অল্প কয়জনের মৃত্যু আর কয়েকজনের করোনাক্রান্তের সংবাদ আসলে সংবাদ নয়, এর পেছনেও সংবাদ আছে। প্রতিদিন জ্বর-সর্দি-কাশিতে মৃত্যুর সংখ্যাও কিন্তু অনেক, সংখ্যার বাস্তবতায় এদেরও যোগ করেন। আমরা জাতিগতভাবেও একটু ক্যাচাল স্বভাবের। হাতের মধ্যে থাকা বোমা নিয়েও খেলতে থাকি,যতক্ষণ বিস্ফোরণ না হয়, ততক্ষণ বিশ্বাস করিনা। নিজের সমস্যা না হলে অন্যের বা রাষ্ট্রের সমস্যাকে সমস্যা মনে করিনা। আমার -আপনার আশেপাশে অনেকেই করোনাক্রান্ত কিন্তু তারা টেস্ট করাচ্ছেন না, অন্য কাউকে বুঝতে দিচ্ছেন না অথবা ইমিউন সিস্টেম ভালো বলে লক্ষ্মণ প্রকাশ পাচ্ছে না কিন্তু অবলীলায় করোনা ভাইরাস বিলিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ইচ্ছে করেই করোনা সম্ভাব্যতা জেনেও নিজের ও পরিবারের অপমান, অপদস্ত ও নাজেহাল হওয়ার ভয়ে করোনার কথা স্বীকার করছে না। মারা যাবার পরও স্বজনরা সত্যি কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। কত সমস্যা! পুরো বাড়ি লক্ ডাউন করা, দিন রাত খেতে না পারার সম্ভাবনা , পাড়া প্রতিবেশী আর কিছু ধর্মান্ধের কাছে পাপী অভিশপ্ত হিসেবে নাজেহাল হওয়া, চিকিৎসায় বাধা, দাফন কাফনে বাধা, আরো কত কি! প্রিয় এপেক্সিয়ানরা, করোনা অনেকটাই কমিউনিটি ট্রান্সমিটেড হয়ে গেছে, করোনা পরীক্ষাগার বাড়ছে আর কয়েকদিনে শত শত, হাজারে হাজারে সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে-গিয়েছে। এখন কার কোনদিকে করোনা এটা যাচাই করার সময় নেই। আর্তমানবতার সেবায় নিজে বেচেঁ থাকতে হবে, পরিবারকে বাচিঁয়ে রাখতে হবে। নিজে বেচেঁ না থাকলে, সুস্থ না থাকলে পরে অসংখ্য লোক আমার-আপনার সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা নিজেরাই যদি ঘরে ঢুকার সময় পরিবারের জন্য দূর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আসি! তাহলে নিজেদের অপরাধবোধ যেমন পীড়া দিবে,তেমনি পরিবারের বেঁচে থাকার যুদ্ধে ব্যস্ত হতে হলে অন্যরাও আমাদের সেবা কার্যক্রম হতে বঞ্চিত হতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোর খাদ্য সামগ্রী বিতরণে কিছুটা সমন্বয় প্রয়োজন, সরকারের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ও করোনা মোকাবিলা স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন হচ্ছে সেটি অনুধাবন প্রয়োজন। এই মুহুর্তে সবার প্রথমে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত প্রয়োজন। এখন চিকিৎসক আর চিকিৎসা সংশ্লিদের সময় শুরু হয়ে গেছে, উনারাও উনাদের যুদ্ধে সক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন ; প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ফ্রন্ট লাইনে আছে তাদের কাজ করতে দিন, তাদের স্যালুট দিন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, সহযোগিতা করুন, উৎসাহ দিন। আর নিজেরা একটু থেমে, একটু পিছিয়ে, একটু নিরাপদে থেকে পরবর্তী স্পেলের জন্য গুছিয়ে নিন। এখনো বহু পথ দিতে হবে পাড়ি। একটু থেমে সরকারি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে চোখ বুলান, কেউ বাদ পড়লে তাদের লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিন। সরকার যদি খাদ্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে তাহলে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সহায়তা ইত্যাদির দিকেও মনোযোগ দিতে হবে, রোগটি যেনো আর ছড়াতে না পারে সেই দিকে মনযোগী হতে হবে। আর তাই বর্তমানে রোগটির গতিবিধি বোঝার জন্য, আমার -আপনার মাধ্যমে যেন না ছড়ায় সেজন্য কয়েকদিন ঘরে থাকা প্রয়োজন। অনেকেই খুবই দুঃসাহসী, আবার অনেকেই অবুঝ তাদের জন্য বলা- ‘ জন্ম মৃত্যু আল্লাহর নির্দেশে হয়’ কিন্তু, সেই আল্লাহ কর্তৃক বারবার করে আত্মহত্যা নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ বালা-মুসিবতের মাধ্যমে বান্দার পরীক্ষা নেন,কিন্তু বান্দার কখনো আল্লাহর পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়( অনেকেই বলে থাকেন আল্লাহ যদি সত্যি হয় তাহলে … কিছুই হবেনা )। মহামারী নিয়ে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নির্দেশনা আছে, আমাদের কখনো হযরত মুহাম্মাদ( সা.) এর চেয়ে বড় মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। প্রিয় এপেক্সিয়ান, যুদ্ধে জেতার জন্য আগানোর পাশাপাশি পিছিয়ে আসাও জানতে হয়। আর তাই নিরাপদ দুরত্বে থাকুন, কয়েকদিন ঘরে বসে বসে সত্যিকারের অভাবী, বিপদগ্রস্তের তালিকা করুন। খেতে না পারলে ক্ষুধায় কষ্ট পাবে, তা দূর করা যাবে আর মারা গেলে বা অসুস্থতায় কিছু খাওয়ার বা বিলি করার মতো পর্যায় না থাকলে খাদ্য কোন কাজেই আসবে না। ওহ্ হ্যাঁ আরো একটা কাজ করতে পারেন, যারা করোনা নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করে, আড্ডা দেয়,ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে, ভাব দেখায় সৃষ্টি কর্তার ওহী নাযিল হয়েছে যে, তাদের কিছু হবেনা! তাদের একটা তালিকা করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দেন, কেননা অচিরেই হাসপাতালগুলোর অসংখ্য সহায়ক লোকজন লাগবে, সারি সারি কবর খোঁড়ার জন্য লোক লাগবে। প্রিয় এপেক্সিয়ানবৃন্দ, এপেক্স বাংলাদেশ এর জাতীয় বোর্ড সারাদেশের ১৪০টি চাটার্ড ও আনচার্টাড ক্লাবের সদস্য, লাইফ গভর্নর, অতীত জাতীয় সভাপতিবৃন্দ,লাইফ মেম্বার, ন্যাশনাল অফিসিয়াল ও ডিস্ট্রিক্ট অফিসিয়ালদের সাথে নিয়ে ও তাদেঁর সহযোগিতায় করোনা মোকাবিলায় একটি কার্যকরি ও দীর্ঘ মেয়াদি সেবা ও জীবন রক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।আপনাদের চূড়ান্ত বাজেট ও এ্যাকশান প্ল্যান ২/১ দিনের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হবে। প্রিয় এপেক্সিয়ানদের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনারা কয়েকদিন ঘরে থাকুন,নিরাপদে থাকুন, আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসুন।

বিনীত

এপেক্সিয়ান নিজাম উদ্দিন পিন্টু

জাতীয় সভাপতি, এপেক্স বাংলাদেশ

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*